মানুষ যদি আল্লাহর নির্দেশ মতো চলে, তাহলে সে ফেরেশতাকেও ছাড়িয়ে যায়। আর যদি গোমরাহির মধ্যে থাকে। ইসলামের বিধান মানতে নারাজ হয়, তাহলে সে শয়তানের চেয়ে খারাপ হয়ে যায়। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ মানুষকে বুদ্ধি-বিবেক দিয়েছেন। কিন্তু অন্য কোনও মাখলুকাতকে সেটি দেননি।
ফলে মানুষ চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করতে পারে। আর মানুষের সেই চিন্তা-ভাবনা যদি ঈমানের সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়। সবার কল্যাণের জন্য হয়, তাহলে ফেরেশতার থেকেও অধিক মর্যাদার অধিকারী হয়।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে আবদার করলেন, হে রব! আপনি মানবজাতিকে দুনিয়া দান করেছেন, তারা পানাহার করে, বস্ত্র পরিধান করে আর আমরা সদা আপনার প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করছি। আমরা পানাহ করি না, কোনও কৌতুক করি না, তাই মানবজাতিকে যেমন দুনিয়া দান করেছেন, তেমনিভাবে আমাদের আখেরাত দান করুন। আল্লাহ তাআলা প্রত্যুত্তরে বললেন, যাদের আমি নিজ কুদরতি হাতে সৃষ্টি করেছি, তাদের সমতুল্য এমন কাউকে করব না, যাদের কুন (হও) দ্বারা সৃষ্টি করেছি।’ (আল-মুজামুল আওসাত:৭/৯৯)
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আমি অবশ্যই মানবজাতিকে সম্মানিত করেছি এবং স্থলে ও সমুদ্রে প্রতিষ্ঠিত করেছি।’ (সূরা ইসরা : ৭০)
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, জায়েদ ইবনে হারাম (রা.) নামে এক গ্রাম্য সাহাবি নবীজিকে (সা.) গ্রামের জিনিস উপহার দিতেন। তিনিও তাকে শহরের জিনিস উপহার দিতেন। নবীজি (সা.) উপহাস করে বলতেন, জায়েদ আমার গ্রাম্য বন্ধু, আর আমি তার শহুরে বন্ধু। নবীজি (সা.) তাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। জায়েদ (রা.) ছিলেন খুবই কৃষ্ণকায় ব্যক্তি। একদা জায়েদ (রা.) মদিনার বাজারে গ্রামের জিনিসপত্র বিক্রি করছিলেন, এমতাবস্থায় নবীজি (সা.) জায়েদকে (রা.) চেহারা ফিরিয়ে নবীকে (সা.) দেখতে পেয়ে জায়েদকে (রা.) পেছন দিক দিয়ে জাপটে ধরেন। জায়েদ (রা.) নবীকে (সা.) চিনতে না পেরে বলেন, তুমি কে? আমাকে ছেড়ে দাও।
জায়েদ চেহারা ফিরিয়ে নবীকে (সা.) দেখতে পেয়ে নিজের শরীরকে প্রিয় নবী (সা.) এর পবিত্র শরীরের সঙ্গে লাগানোর চেষ্টা করেন। নবীজি (সা.) বলতে লাগলেন, এ গোলামকে কে কিনবে? আমি একে বিক্রি করবো। জায়েদ (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সস্তায় বিক্রি করতে হবে। কারণ আমি কালো-কুৎসিত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘জায়েদ! তুমি সস্তা নও, তোমার রবের কাছে তুমি অনেক দামি!’ (তিরমিজি সূত্রে মেশকাত : ৪১৬)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে সাধারণ ফেরেশতার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান।’ (বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান : ১/১৭৪)।
নবীজি (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘একজন সাধারণ ঈমানদার আল্লাহর কাছে কিছু কিছু ফেরেশতা থেকেও অধিক সম্মানী। অর্থাৎ মুমিনমাত্রই বিশেষ বিশেষ ফেরেশতা থেকে আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানী।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/৫৩)
ব্রেকিংনিউজ/এসআই